একদিনে প্যারিস – পর্ব ৫

What is the meaning of the word 'Nike', the famous global sports brand? Can simple things like name and signature of an artist become art themselves? All these questions will be answered in this episode, from the halls of the Louvre Museum.

পৃথিবী বিখ্যাত ব্র্যান্ড Nike শব্দের অর্থ কি? শিল্পকর্মে শিল্পীর নাম, তারিখ দেওয়া থাকে – কিন্তু সেই তুচ্ছ জিনিস কি কখনও নিজেই শিল্পের পর্যায়ে যেতে পারে? মোনা লিসার মতো পৃথিবী বিখ্যাত একটা ছবি কতরকম ভাবে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে? এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর মিলবে ‘একদিনের প্যারিস’ এর পঞ্চম পর্বে – ল্যুভর মিউজিয়াম এর ভেতরে।

ইতিহাসের পাতা উলটে দেখা – A Brief History of Louvre Museum

প্যারিসের বিখ্যাত ল্যুভর মিউজিয়াম যে জায়গাতে অবস্থিত, তার ইতিহাস দ্বাদশ শতাব্দী থেকে শুরু হয়। প্যারিস শহরের বাইরে এই জায়গায় প্রথমে তৈরি হয় একটা দুর্গ, তৎকালীন ফ্রান্সের রাজা ফিলিপ অগাস্টাসের নির্দেশে। সময়ের সাথে সাথে এই দুর্গের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে আসে। ১৫৭৮ সালে ভ্যালোইয়ের রাজা প্রথম ফ্রান্সিসের নির্দেশে দুর্গটি একটি রাজকীয় বাসভবনে রূপান্তরিত করা হয় রেনেসাঁ যুগের শিল্প কীর্তির আদলে। এর পরের কয়েক শতাব্দী ধরে এই রাজপ্রাসাদ হয়ে থাকে বিভিন্ন রাজাদের বাসস্থান। ১৫৬৪ সালে নির্মিত টুইলারিস প্রাসাদের সাথে এই দুর্গটি যুক্ত করা হয়। সময়ের সাথে সাথে এই প্রাসাদ এবং দুর্গ দুটোই বড় হতে শুরু করে। একটা সময় এখানে থাকতেন ফ্রান্সের রাজা প্রথম ফ্রান্সিস, যার সংগ্রহে ছিল অনেক ইতালিয়ান পেইন্টিং – যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য মোনা লিসা। এই সংগ্রহ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে রাজা প্রথম ফ্রান্সিসের উত্তরাধিকারীদের হাত ধরে। ১৭৯৩ সালে শুরু হয় ফরাসী বিপ্লব। রাজতন্ত্রের অবসানের সাথে সাথে এই রাজপ্রাসাদ পরিণত হয় একটি মিউজিয়াম এ, নাম হয় মুসি ফ্রাঁসেস। মিউজিয়াম এর সংগ্রহ এরপর বাড়তে শুরু করে নেপোলিয়নের ফ্রান্সের সৈন্য দলের দৌলতে। ইউরোপের কোন দেশ অধিকার করা হলেই সেই দেশের শিল্পকর্ম নিয়ে আসা হতে থাকে মুসি ফ্রাঁসেস এর ভেতরে। ১৮০২ সালে মুসি ফ্রাঁসেস নাম বদলে হয় মুসি নেপোলিয়ন। ১৮৭১ সালে টুইলারিস প্রাসাদ পুড়িয়ে দেওয়া হয় তৎকালীন কর্তৃপক্ষের আদেশে। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে মুসি নেপোলিয়ন নাম পাল্টে হয় মুসি দ্যু ল্যুভর, বা শুধু ল্যুভর। ১৯৮৯ সালে বিখ্যাত মিং পেই গ্লাস পিরামিড এর সামনের স্কোয়ারে যুক্ত করা হয়, এবং ল্যুভর তার আজকের চেহারা পায়।

দ্রষ্টব্য ছয় – Louvre Museum

বৃষ্টি মাথায় নিয়ে যখন ল্যুভরের সামনে এসে দাঁড়ালাম, তখনও ১৫ মিনিট বাকি ১২ টা বাজতে। মাঝখানের ওই বিখ্যাত কাঁচের পিরামিড, যা এক ঝলক দেখলে মনে হয়, যেন এক রাজকন্যা তার দু হাত দিয়ে আগলে রেখেছে কোলের ওপর রাখা তার খেলনা কাঁচের পিরামিডটাকে। রাজকন্যাকে লোকে চেনে Cour Carrée নামে, আর ওই দুই হাতের বাঁ দিকের টা Richelieu Wing আর ডানদিকে Denon Wing। আর ওই যে তার কোল যেখানে তার খেলনা পিরামিডটা রাখা, সেই চত্বরের নাম Cour Napoléon। আকাশের দিকে মুখ উঁচিয়ে থাকা ওই খেলনা পিরামিড যেন গল্পে পড়া টাইম মেশিন, বর্তমান থেকে অতীতে যাবার জন্য বানানো এক মাধ্যম। ভাবতেও অবাক লাগে, দ্বাদশ শতাব্দীর এই রাজপ্রাসাদ কত উত্থান-পতন, কত পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে কি অসীম ধৈর্যে নিজের মধ্যে সযত্নে আগলে রেখেছে মানব সভ্যতার ক্রমবিবর্তনের ইতিহাস। এই ইতিহাসের গল্প সে তোমাকেও শোনাতে চায়, যুগ যুগ ধরে এই কাজ করেও সে ক্লান্ত নয়। পৃথিবীর সব প্রান্তের সব ইতিহাসের রক্ষকদের সে রানী, আজও সে পারে প্রতিদিন কত লক্ষ লোকের মনে বিস্ময় জাগাতে। ওই পিরামিড তার সেই গোপন কুঠিতে ঢোকার দরজা, যার আশেপাশে এই দুর্যোগেও কৌতূহলী জনস্রোত বুঝিয়ে দেয় তার আকর্ষণের ক্ষমতা।

Entry to the Louvre Museum

ল্যুভর দেখার প্ল্যানিং

সেই আকর্ষণে আমিও উপস্থিত হলাম তার দরজায়, গিয়ে দেখি ছাতা মাথায় বা রেনকোট পরা অসংখ্য ট্যুরিস্ট চারপাশে। লম্বা লাইন পরেছে এই বৃষ্টিতেও টিকিট কাটার। কি ভাগ্যিস, আমি অনলাইন টিকিটটা কেটে এনেছিলাম। আমাদের মতো ট্যুরিস্টদের জন্য আলাদা লাইন, কিন্তু সেটাও লম্বা, আর সেই লাইনের আশেপাশে একটু ঘোরাঘুরি করে বুঝতে পারলাম টিকিটে যে সময় লেখা আছে, তার আগে ঢুকতে দেবে না। বৃষ্টিতে ভিজে, হেঁটে, তখন মনে হচ্ছে কখন ওই পিরামিডের মধ্যে ঢুকতে পারবো, তাহলে অন্তত বৃষ্টিটা থেকে বাঁচব। কিন্তু উপায় নেই, বাধ্য হয়ে এদিক ওদিক ঘুরে বেরাতে লাগলাম। পৃথিবীর সব দেশের, সব ভাষার মানুষ এখানে বোধ হয় আজ জমা হয়েছে। যদিও আমি জানি এ জিনিস রোজই এখানে ঘটে, বরং আজ কিছু কম হলে আশ্চর্য হবার নেই। অবশেষে নির্দিষ্ট সময়ে, মোবাইলের ই-টিকিট পিরামিডের সামনে দাঁড়ানো সিকিইরুটি গার্ডকে দেখিয়ে, নিজের শরীরের ওপর থেকে নীচ পর্যন্ত পরীক্ষা করিয়ে, তবে ভেতরে ঢোকার অনুমতি মিলল। ঘড়িতে তখন ঠিক দুপুর ১২টা।

আসার আগেই জানতাম এই বিশাল বড় আর্ট গ্যালারি ঘুরে দেখতে পারবো না এই অল্প সময়ে। চল্লিশ হাজারেরও বেশী শিল্পকর্ম রয়েছে এর ভেতরে। ন’টা ভাগ রয়েছে, যাদের নাম Decorative Arts, Egyptian Antiquities, Greek, Roman and Etruscan Antiquities, Near Eastern Antiquities, Islamic Art, Paintings, Prints and Drawings, এবং Sculptures and Architectural Views।

ভালো ভাবে দেখতে হলে একটা দিন পুরো লাগবে। তাই আসার আগে কি কি জিনিস দেখবো তার একটা ধারণা করে এসেছিলাম। এই বিশাল বড় আর্ট গ্যালারির সমস্ত সম্পদকে ছবি আর মূর্তি – এই দুটো প্রধান ভাগে ভাগ করেছিলাম। ছবির মধ্যে লিওনার্দো দা ভিঞ্চির মোনা লিসা ছাড়াও পিয়েট্রো পেরুগিনো নামের আরও এক রেনেসাঁ যুগের শিল্পীর ছবি দেখার ইচ্ছে ছিল। আর মূর্তির মধ্যে হেলেনিস্টিক শিল্পের একটা নিদর্শন। হাতে যেহেতু সময় কম, তাই এতো বড় মিউজিয়াম এর মধ্যে ঘুরতে হবে একটা নির্দিষ্ট পথ ধরে, না হলে এর গোলোক ধাঁধায় পথ হারানো নিশ্চিত। এরকম রুট কে বলে Thematic trail।

Thematic Trail

আমি যে Thematic trail টা ধরে হাঁটা শুরু করলাম সেটার নাম The Da Vinci Code, Between Fiction and Fact। Dan Brown এর লেখা The Da Vinci Code আমার খুব প্রিয় একটা উপন্যাস। এই ট্রেলটা ডিজাইন করা সেই উপন্যাসের গল্পকে ভিত্তি করে। এই অভিজ্ঞতার বিবরণ দিয়ে একঘেয়ে করবো না। শুধু এটুকু লিখলেই যথেষ্ট হবে যে আর্টের কিছু না বোঝা এই আমিও অবাক হয়েছিলাম এই মিউজিয়ামের সম্পদের প্রাচুর্যে, আর্ট গ্যালারির গোলোক ধাঁধায় পথ হারিয়েছিলাম বেশ কয়েকবার। এর যাত্রা শুরু পিরামিডের নীচের হল ঘর থেকে, যার নাম The Hall Napoléon। সেই হলে পৌঁছে দেখি ট্যুরিস্টের ভিড়ে হল একবারে গমগম করছে। সামনেই একটা ইনফর্মেশন কাউন্টার, যেখানে অনেক রকম ভাষায় স্বাগত লেখা হয়েছে, হিন্দিও চোখে পড়লো।

মোবাইলের ম্যাপ খুলে রুটটা ঠিক করে হাঁটা শুরু করলাম। যে দুটো হাতের কথা আগে লিখেছি, তার মধ্যে আমি শুধু ঘুরেছিলাম Denon Wing ধরে। গ্রীক স্ট্যাচু Hera of Samos থেকে শুরু করে Paris Meridian (১৮৮৪ সালে Greenwich Mean Time বা GMT হওয়ার আগে পৃথিবীর সময় চলত এই লাইন ধরেই) দেখে এসে উপস্থিত হলাম এই মিউজিয়ামের সবথেকে পুরনো ঘরে, যার নাম The Salon Carré (হ্যাঁ, এই Salon শব্দ থেকেই আজ পৃথিবীর যে কোন এক্সজিবিশনকে Salon নামে ডাকা হয়)। এই ঘরের ছাদের দিকে তাকালে রঙ আর ছবির বৈচিত্র্যে মাথা ঘুরে যায়। এরপর এসে পৌঁছলাম রুম নাম্বার ৭১১-১-ডেনন, যেখানে দেয়ালের এক দিকে ল্যুভরের সবথেকে বড় তৈলচিত্র The Wedding Feast of Cana আর অন্য দেয়ালে ল্যুভরের সবথেকে বিখ্যাত তৈলচিত্র Monna Lisa।

Ceiling of a hall in Louvre

এবং Monna Lisa

লম্বা লাইন Monna Lisa র কাছে যাওয়ার। আমিও দাঁড়ালাম একটা লাইনে, ১০ মিনিট লাগল লাইনের শেষ থেকে প্রথমে যেতে। দু দিক থেকে লাইন এসে ধাক্কা খেয়েছে একটা রেলিং এ, যার ওপাশে হাত তিনেক দূরে সেই বিখ্যাত তৈলচিত্র। ছোটবেলা থেকে বইয়ের পাতায় দেখা জিনিষ এত সামনে থেকে দেখার যে কি অনুভূতি, তা আমি লিখে বোঝাতে পারবো না। ১৫০৪ সালে রেনেসাঁ যুগে লিওনার্দো দা ভিঞ্চির আঁকার পর থেকে যে ছবি সারা পৃথিবীর মানুষকে আকর্ষণ করে চলেছে আজও সমান ভাবে, তার এত কাছে দাঁড়িয়ে রোমাঞ্চ হয়। ১৯১১ সালে প্রথম চুরি হওয়ার পর থেকে, নিউ ইয়র্ক, ওয়াশিংটন, মস্কো, টোকিয়ো ঘুরে Monna Lisa আজ প্যারিসের অধিবাসী, অমলিন তার সেই হাসি নিয়ে যার রহস্য আজও গোটা পৃথিবীর কাছে অধরা। কাঁচের আবরণের পেছনে দাঁড়িয়ে আজ সে সাধারন মানুষের হাতের নাগালের বাইরে, সুরক্ষিত ক্যামেরার ফ্ল্যাশ আর বাতাসের অক্সিজেন থেকে। কল্পনা আর সত্যির মিশেলে, সময়ের মাপকাঠিতে অমর ওই হাসি আজও বোঝাতে চায় যে সে শুধুমাত্র স্রষ্টার কল্পনা নয়, বরং অনুপ্রেরণা যাকে লোকে চিনত Madonna Elisabetta Gherardini নামে।

শিল্পীর চিহ্ন

২ মিনিটের বেশী এই সান্নিধ্য উপভোগ করার অনুমতি নেই, তাই বেরিয়ে পড়লাম এই গ্যালারি থেকে। লম্বা করিডর দিয়ে হেঁটে ফেরার সময় চোখে পড়ল দু’দিকের দেওয়ালে আরও অনেক নাম করা আর আমার নাম না জানা তৈলচিত্র। এর মধ্যে একটা ছবির কথা আমার মনে আছে। ছবিটা আঁকা Lorenzo Lotto নামে এক ইতালিয়ান শিল্পীর। যীশু খ্রিষ্টের ছবি। ছবিতে যীশু খ্রিস্ট নিজের কাঁধে একটা ক্রস বহন করে নিয়ে চলেছেন। এর আগে যত ছবি দেখেছি, সব জায়গায় দেখেছি শিল্পীর নাম এবং তারিখ ছবির নীচে বা ওপরে একদম ডানদিকে বা বাঁদিকে লেখা থাকে। এই ছবিতে কিন্তু সেটা নয়। একটু ভালো করে লক্ষ্য করলে বোঝা যায়, শিল্পীর সই এবং তারিখ যীশু খ্রিষ্টের সেই ক্রসের ওপর লেখা – ওপর থেকে নীচে। ছবিতে যীশু খ্রিষ্টের সাথে আরও দু’জন লোক – কিন্তু শিল্পী যেন চান তাঁর নাম জড়িয়ে থাকুক শুধুমাত্র যীশু খ্রিষ্টের সাথেই।

Look at the cross closely, and you will find the signature

মূর্তির গল্প – ল্যুভরের এক অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন

ল্যুভরে যে শুধুমাত্র হল ঘরগুলোর নাম আছে, তাই নয়। প্রত্যেকটা বারান্দা, সিঁড়ি – এগুলোরও বিভিন্ন নাম। যেমন একটা সিঁড়ির নাম Daru staircase। এই সিঁড়ির ঠিক মুখে একটা নারী মূর্তি চোখে পড়ল। মূর্তিটার মাথা নেই, হাতও নেই। মূর্তির দু’পাশে দুটো ডানা। যে জিনিসের ওপর মূর্তিটা দাঁড়িয়ে রয়েছে, সেটা একটা জাহাজের সামনের দিকের মতো দেখতে। দেখে মনে হয় এক নারী যেন ওপর থেকে নেমে আসছেন একটা জাহাজের ওপরে দুপাশের দুটো ডানা আন্দোলিত করে। সিঁড়ির ঠিক মুখটাতে রাখা বলে যেন এই নেমে আসাটা আরও ভালো করে বোঝা যায়। কাছে এগিয়ে গেলাম কি লেখা আছে সেটা দেখার জন্য।

Nike (Winged Victory) of Samothrace

মার্বেলের তৈরি এই মূর্তিটার নাম Nike of Samothrace, বা Winged Victory of Samothrace। ১৮৬৩ সালে ফরাসী প্রত্নতাত্ত্বিক Charles Champoiseau এটি আবিষ্কার করেন Samothrace নামক এক গ্রীক দ্বীপে। ১৮৮৪ সালে এই মূর্তিটা আসে ল্যুভর মিউজিয়াম এ, আর সেদিন থেকেই হয়ে ওঠে এক বিস্ময়ের বস্তু। গ্রীক পুরাণ মতে, Nike ছিলেন জয়ের দেবী, বা Goddess of Victory। Nike কে প্রথমে মনে করা হতো আকাশের দেবতা Zeus এর পরিচারিকা, কিন্তু পরে গ্রীক পুরাণ Nike কে তুলে ধরে Zeus এর পাশে দাঁড়িয়ে যুদ্ধরত এক নারী হিসেবে, যার জন্য তাঁর নাম হয় Goddess of War। যুদ্ধে বিজয়ীর হাতে পুষ্পস্তবক তুলে দিতেন স্বয়ং Nike, তাই তাঁর নাম হয় Goddess of Victory বা Triumph। এই দেবী মূর্তির সৃষ্টিকর্তার নাম আজও জানা যায়নি। কিন্তু দেবী মূর্তির পায়ের নীচে জাহাজের আদল থেকে এবং মূর্তির পায়ের নীচে Rhodios শব্দ খোদাই করা থেকে এটা মনে করা হয় যে এই মূর্তি তৈরি হয়েছিল ১৯০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে সিরিয়ার Antiochus দের বিরুদ্ধে গ্রীক Rhodian রা জয়লাভ করার পরে।

গ্রীস দেশে অনেক রকম শিল্প ঘরানার মধ্যে একটা ছিল হেলেনিস্টিক ঘরানা, আর এই ঘরানা বোঝা যায় এই মূর্তির কয়েকটা বৈশিষ্ট্য থেকে। প্রথমত, স্বচ্ছ কাপড় দেবীর শরীরে চেপে বসেছে। খুব জোরে হাওয়া দিলে যেমন গায়ের কাপড়ে ভাঁজ পরে, ঠিক সেরকম ওপর থেকে ডানায় ভর করে নেমে আসার জন্য দেবীর কাপড়ে মধ্যে ফুটে উঠেছে হাওয়ার খেলা। গ্রীক ভাস্কর্যের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হল মূর্তির মধ্যে প্রাণের ছোঁয়া এবং তার পোশাকের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম জিনিসগুলো ফুটিয়ে তোলা। এই দেবী মূর্তির হালকা বেঁকে থাকা শরীর, দু’দিকে প্রসারিত ডানা, হাওয়ায় স্বচ্ছ কাপড়ে তাঁর নমনীয় দেহ সৌষ্ঠব ফুটে বেরোনো – গ্রীক ভাস্কর্যের এ এক উৎকৃষ্ট নিদর্শন।

আরও কিছুক্ষণ এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করে, একটা দোকান থেকে কিছু সুভেনির কিনে বেরোনোর পথ ধরলাম। এইটুকু অংশ দেখতেই দু’ঘণ্টা যে কোথা দিয়ে কেটে গেছে, বুঝতেই পারিনি। আর এখানে থাকা চলবে না, পরের গন্ত্যব্যে যেতে সময় লাগবে, সেখানে আর ঘণ্টা খানেকের মধ্যে আমার টিকিট বুক করা আছে। Sortie (মানে, Exit) লেখা ফলো করতে করতে কোন দিক দিয়ে যে বেরলাম, সেটা আর বোঝার চেষ্টা করিনি। বেরিয়ে দেখি প্রথম যে রাস্তা দিয়ে ঢুকেছিলাম, সেই রাস্তায় এসে পড়েছি। বুঝলাম ডান দিকের ডেনন উইং থেকে বেরিয়ে এসেছি। সেই বড় গেট এর তলা দিয়ে বাইরে এসে মেন রাস্তায় উঠলাম, এবার ডান দিকে হাঁটা, পরের জায়গাটা নদীর অন্য পারে। ব্রিজ পেরবো পরে, আপাতত নদীকে বাঁদিকে রেখেই হাঁটা শুরু করলাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *