চীনের এক শতাব্দী প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় – পর্ব ২

দক্ষিণ চীনে অবস্থিত দেশের এবং পৃথিবীর অন্যতম সেরা সান ইয়াট-সেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আজকের কাঠামো
  • ৫টা ক্যাম্পাস
  • ৬৭টা স্কুল
  • ১৭ হাজার শিক্ষক এবং ৭০ হাজার ছাত্র
  • দেশের বৃহত্তম হাসপাতাল ব্যবস্থা
  • এশিয়ার বৃহত্তম টিচিং বিল্ডিং
  • পৃথিবীর দ্রুততম সুপার কম্পিউটার

সব মিলিয়ে আজকের দিনে সান ইয়াট-সেন বিশ্ববিদ্যালয় চীনের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম। আগের পর্বে বলেছিলাম আমার এখানে আসার গল্প আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস। এই পর্বে থাকছেঃ

  • বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটা ক্যাম্পাসের পরিচয়
  • তার ত্রি-স্তরীয় একাডেমিক গঠনের কথা
  • তার দেশবিদেশে খ্যাতির পরিসংখ্যান

ক্যাম্পাস

আজকে সান ইয়াট-সেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি ক্যাম্পাস ছড়িয়ে রয়েছে গুয়াংডং প্রদেশের প্রায় ৬ বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে।

  • প্রথম এবং প্রধান ক্যাম্পাসটির নাম South Campus, যা গুয়াংজু শহরের Haizhu জেলায় অবস্থিত। এখানে প্রধানত Science আর Humanities এর ডিপার্টমেন্টগুলো আছে। আমি আছি এই ক্যাম্পাসে, School of Life Sciences এ।
  • দ্বিতীয়টির নাম North Campus, যা গুয়াংজু শহরের Yuexiu জেলায় অবস্থিত। এখানে Medical Science এর ডিপার্টমেন্টগুলো আছে।
  • তৃতীয় ক্যাম্পাসের নাম East Campus, যেটা গুয়াংজু শহরের Panyu জেলায় অবস্থিত।
  • চতুর্থ ক্যাম্পাস আছে দক্ষিণ চীনের জুহাই শহরে। জুহাই ক্যাম্পাসের টিচিং বিল্ডিং এশিয়ার বৃহত্তম
  • আর পঞ্চম ক্যাম্পাসটা শেনজেন শহরে।
Guangzhou South Campus – administrative building

একাডেমিক গঠন

২০২২ সাল থেকে সান ইয়াট-সেন বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হয় ত্রি-স্তরীয় একাডেমিক শাসন ব্যবস্থা। এই তিনটে স্তর হলঃ বিশ্ববিদ্যালয় (University) – Faculties – স্কুল বা ডিপার্টমেন্ট।

আজকের দিনে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৬৭টা স্কুল আছে, যেগুলো ৭ টা Faculties এর অধীনে আছে –

  • Humanities
  • Social Sciences
  • Economics and Management
  • Natural Sciences
  • Engineering
  • Information Science and Technology, এবং
  • Medicine

তাই আমাকে যদি আমার পুরো affiliation লিখতে হয়, সেটা এরকম দাঁড়ায়ঃ

School of Life Sciences, Faculty of Natural Sciences, Guangzhou South Campus, Sun Yat-sen University।

এছাড়াও আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত ৮ টা হাসপাতাল, আর তার সাথে রয়েছে ক্যান্সার, স্টোম্যাটোলজি এবং চক্ষু বিজ্ঞান কেন্দ্র। সমস্ত দেশের মধ্যে বৃহত্তম হাসপাতাল ব্যবস্থা তাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনায়

২০০৬ সাল থেকে আজ অবধি সান ইয়াট-সেন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছে ৫টা কনফুসিয়াস শিক্ষা কেন্দ্র, পৃথিবীর পাঁচ শহরে।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশালত্ব আন্দাজ করা যায় একটা পরিসংখ্যান থেকে – এখানে ১৭ হাজারেরও বেশী শিক্ষক এবং প্রায় ৭০ হাজার ছাত্র আছে।

বছরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ৩ বিলিয়ন আমেরিকান ডলার, এবং রিসার্চের জন্য বাজেট প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার


খ্যাতি এবং ঐতিহ্য

সান ইয়াট-সেন বিশ্ববিদ্যালয় চীনের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম।

  • ২০২৩ সালে Academic Ranking of World Universities এর সমীক্ষা অনুযায়ী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান চীন দেশে ৭ নম্বরে, এশিয়া মহাদেশে ১১ নম্বরে, এবং বিশ্বে ৭২ নম্বরে
  • যদি গবেষণার নিরিখে বিচার করা হয়, তাহলে Nature Index এর মতে, সান ইয়াট-সেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে ৮ নম্বরে এবং বিশ্বে ১১ নম্বরে
  • বিজনেস, গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, মেডিসিন এবং ফার্মেসিতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোগ্রামগুলো এই দেশের অন্যতম সেরা।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার জন্য এন্ট্রান্স পরীক্ষা হয়। সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ একদম ওপরের মাত্র এক শতাংশ ছাত্রছাত্রী এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনো করার সুযোগ পায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদের মধ্যে রয়েছে বিশ্বের দ্রুততম সুপার কম্পিউটার, Tianhe-2, যার মূল্য ২.৪ বিলিয়ন RMB, মানে প্রায় ৩৯০ মিলিয়ন আমেরিকান ডলার।

Tianhe-2

২০১৭ সাল থেকে অন্তত ৩৬ জন বিলিয়নেয়ার এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁদের গ্রাজুয়েশন করেছেন।

আমি এখানে থাকাকালীন একটা খবর পেয়েছিলাম, যেটা এখানে লিখে রাখা দরকার। ২০২১ সালের জুন মাসে সান ইয়াট-সেন বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করে দেশের মধ্যে সবথেকে বড় সমুদ্রবিজ্ঞান গবেষণা ও প্রশিক্ষণ জাহাজ, এবং এই জাহাজের নাম দেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নামেই।

Marine research ship, named after Sun Yat-sen University